চরিত্র মানুষের অমূল্য সম্পদ। চরিত্রহীন মানুষ চতুস্পদ জন্তুর চেয়েও নিকৃষ্ট! এক শ্রেণির মানুষ বিবেক থাকা সত্ত্বেও খারাপ চরিত্রের কারণে পশুতে পরিণত হয়েছে! মানুষের নৈতিক অবক্ষয় দিনদিন লোপ পাচ্ছে। এদের জন্য বড়ই আফসোস হয়, এদের নিকৃষ্ট চরিত্র পশুত্বকেও হার মানায়! এদের দু:শ্চরিত্রের বিগলিত দূর্গন্ধ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। যা প্রিন্ট এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় দেখতে পাই! এ সমস্ত নর পশুদের হাত থেকে আশি বছরের বৃদ্ধা থেকে শুরু করে ৫ বছরের কোমলমতি শিশুরাও রক্ষা পায়নি! রক্ষা পায়নি নাবালক ছেলেরা পর্যন্ত। এর মধ্যে একশ্রেণির বিকৃত চরিত্রের কথিত লেবাসধারি মৌলভী কর্তৃক বলৎকাররের ঘটনা ও জনমনে আতংক সৃষ্টি করছে !
সমকামিতার দায়ে হযরত লুত (আ:) এর ক্বওমকে জমিন উল্টিয়ে মহান আল্লাহ সমূলে ধ্বংস করেছিলেন এবং মহাগ্রন্থ আল কোরআনে সমকামিতার কঠিন শাস্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সেই বিকৃত চরিত্রের মানুষ নামের পশুরা এখনও এ সমাজে আছে। এ চরিত্রের কেউ কেউ শিক্ষকতার মতো মহান পেশায়ও ব্রত আছে। যে সমাজে শিক্ষকদের হাতে শিক্ষার্থী নিরাপদ নয়, সে সমাজ কেমন চলছে তা সহজেই অনুমেয়? বাস্তবে প্রমান পাওয়া যায় মুসলিম বিশ্বের সেরা দার্শনিক ইমাম গাজ্জালী (রহ.) এর মহামূল্যবান বাণী থেকে।
তিনি বলেছেন, “ যখন দেখবে শিক্ষক আর চিকিৎসক অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে, তখন ধরে নিও সমাজ অধ:পতনের চূড়ান্তসীমায় পৌছে গেছে”। আদতে সব শিক্ষিত মানুষই মানুষ নয়, তন্মধ্যে কিছু অমানুষও আছে! যেমন শিক্ষক সিরাজ উদদৌলা, পরিমল, মোজাম্মিল গংরা!
ফেইসবুক কি সংবাদ প্রচারের মাধ্যম?
এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৯ এর প্রথম ৬ মাসে নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ২ হাজার ৮৩টি। তন্মধ্যে ধর্ষণ ৭ শত ৩১, গণ ধর্ষণ ১শত ১৩, হত্যা ২শত ৭৬জন, সূত্র: প্রথম আলো পত্রিকা।
এসব হচ্ছে পত্রিকায় রিপোর্টের আলোকে জরিপ। আদতে হয়তো আরো বেশি হবে। ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, হত্যা প্রভৃতি আগে যে ছিল না এমন নয়। কিন্তু এখন এত বেশি হওয়ার হেতু কী আসুন একটু নির্ণয় করি। প্রথমেই বলতে হবে আজকাল যে বা যারা শিক্ষিত হন তাদের বড় একটি অংশের উদ্দেশ্য হচ্ছে চাকুরী পাওয়া। চাকুরী পেলে বেশ সুখে-শান্তিতে থাকতে পারবে এ জন্যে শিক্ষিত হওয়া। তাদের উদ্দেশ্য এটি নয় লেখাপড়া করে মানুষের মতো মানুষ হওয়া, সমাজ, দেশপ্রেমতো আরো অনেক দূরে !
তরুনদের নৈতিক অবক্ষয় : এ দায় কার ?
মূলত দেখবেন ওই জাতীয় উদ্দেশ্যের শিক্ষিতদের মধ্যেই যতসব অন্যায়- অপরাধ, দূর্নীতি ইত্যাদি সংঘটিত হচ্ছে! দ্বিতীয় হচ্ছে, সামাজিক বিচার ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়া! আগে অপরাধ করার সঙ্গে সঙ্গেই এর কঠিন বিচার হতো। এখন সেটা প্রায় অনুপস্থিত। তৃতীয় কারণ হচ্ছে, রাজনৈতিক অস্থিরতা। সমাজ এবং প্রশাসনকে রাজনীতি করণের ফলে অনেক অপরাধী ক্ষমতাবানদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে পার পেয়ে যাচ্ছে।
চতুর্থ কারণ হচ্ছে, রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যাওয়ার প্রবণতা! অর্থাৎ- ন্যায়-অন্যায়ের বালাই না করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে বাড়ি, গাড়ি, ব্যাংক ব্যালেন্স করার নগ্ন প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হওয়া! পঞ্চম কারণ হচ্ছে, শুধুমাত্র স্বীয় পরিবারের সুখ-শান্তি নিয়ে ভাবা। ৬স্ট কারণ হচ্ছে, যথাযথ ধর্মীয় শিক্ষার অভাব।
বিখ্যাত ফার্সি কবি ফরীদুদ্দীন আত্তার (রহ.) যথার্থই বলেছেন, চারটি জিনিস মানুষকে ধ্বংস করে,(১) বাদশাহর নৈকট্য,(২) অসৎলোকের সাথে বন্ধুত্ব, (৩) দুনিয়ার প্রতি আকর্ষণ,(৪) নারীদের সাথে অধিক সংসর্গ। সে দিন নারী ঘটিত ঘটনার জের ধরে বরগুনায় দিন দুপুরে প্রকাশ্যে রিফাতকে নির্মম ভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
মাদরাসার ছাত্রী নুসরাতকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করার ঘটনায় বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে ঝড় উঠেছে। এর রেশ কাটতে না কাটতেই ৬ বছরের ফুট ফুটে শিশু সায়িমাকে ধর্ষণ করে হত্যার ঘটনায় বিবেকবান মানুষ বাকরুদ্ধ হয়েছেন। তা ছাড়া এরই মধ্যে দিয়ে আরো লোমহর্ষক ঘটনা ঘটেছে। একের পর এক নারী নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণ, তরুণ প্রজন্মের মাদকাসক্তে আসক্তির খবরে জনগণের সাথে সরকারও বেশ বিব্রত।
নাগরিকদের নৈতিক অবক্ষয় : এ দায় কার ?
মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, শিশু ধর্ষণের ঘটনায় বিবেককে নাড়িয়ে দেয়”। সত্যিই এসব প্রাণঘাতি ঘটনায় মানুষকে নাড়িয়ে দিয়েছে! গণমাধ্যম দায়িত্ব নিয়ে সাহসীকতার সাথে নর পশুদের মুখোশ উন্মোচন করছে । মানুষের নৈতিক অবক্ষয় এ মূলত দায়ী কে ? নিশ্চয় এ সমাজ, এ রাষ্ট্র। যখন যে সরকারে এসেছে তাদের কতিপয় নেতাদের ব্যক্তিগত স্বার্থে নয়ন বন্ডদের ব্যবহার করেছে। নয়ন বন্ডরা একদিনে সৃষ্টি হয়নি এবং প্রকাশ্যে জনসম্মুখে হত্যা করার মতো ধৃষ্টতার সাহস একদিনে হয়নি।
যখন যে সরকার ক্ষমতায় এসেছে, তাদের ছাত্র সংগঠনসহ অসাধু নেতাদের ছত্র ছায়াই নয়ন বন্ডরা তৈরী হয়েছে। যা হবার হয়েছে, এখন সচেতন মানুষদের দায়িত্ব হচ্ছে জন সাধারণকে এ ব্যাপারে জাগিয়ে তোলা, অভিভাবকমহলকে সন্তান কী করছে তা নজরদারি আরো বৃদ্ধি করা, শ্রেণি শিক্ষকদের প্রতি প্রধান শিক্ষক এবং ম্যানেজিং কমিটির দায়িত্বশীলদের কড়া দৃষ্টি নিবদ্ধরাখা, বিচারের দীর্ঘ বিড়ম্বনা দূর করা, দূর্নীতির লাগাম টেনে ধরা, জন সাধারণকে সংঘটিত ছোট ছোট অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করাসহ সর্বোপরি সকল অন্যায়কে মুলোৎপাঠন করতে প্রয়োজনে আইন সংশোধন করে হলেও অপরাধীদের শাস্তির বিধান নিশ্চিত করতে হবে। তবেই সারা বিশ্বে উন্নয়নশীল শান্তিময় দেশ হিসেবে প্রিয় বাংলাদেশ স্থান করে নিবে।
লেখক- শিব্বির আহমদ আরজু:
সম্পাদক- মাসিক সাহিত্য পত্রিকা ‘তরঙ্গ’ ও
ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক, সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশন,
হবিগঞ্জ।